![]() |
ক্লদিও এচেভেরি: সিটির নতুন আর্জেন্টাইন তারকা |
ম্যানচেস্টার সিটি ক্লাবটি বিশ্ব ফুটবলে বরাবরই প্রতিভাবান আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়দের জন্য এক উর্বর ভূমি হিসেবে পরিচিত। সার্জিও আগুয়েরোর ঐতিহাসিক গোল থেকে শুরু করে কার্লোস তেভেজের কঠোর পরিশ্রমী মনোভাব, এবং সাম্প্রতিককালে বিশ্বকাপজয়ী জুলিয়ান আলভারেজের বহুমুখী প্রতিভা—নীল জার্সি গায়ে আর্জেন্টাইন তারকারা বারবার নিজেদের প্রমাণ করেছেন। এবার সবার নজর তরুণ ক্লদিও এচেভেরির দিকে, যার সাম্প্রতিক অভিষেক ম্যানচেস্টারের বুকে এক নতুন আর্জেন্টাইন উত্তরাধিকারের আগমনী বার্তা বয়ে এনেছে।
১৯ বছর বয়সী অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার ক্লদিও এচেভেরি জানুয়ারি ২০২৪-এ ম্যান সিটিতে যোগ দিলেও, তার বিকাশের জন্য তাকে আরও এক বছর রিভার প্লেটে ধারে রাখা হয়েছিল। সম্প্রতি ক্লাব বিশ্বকাপে তার পূর্ণাঙ্গ অভিষেক ঘটেছে, যেখানে আল-আইনের বিপক্ষে ৬-০ গোলের দাপুটে জয়ে তার উজ্জ্বল পারফরম্যান্স ফুটবলপ্রেমীদের মন জয় করে নিয়েছে। এই অভিষেক কেবল একটি ম্যাচ ছিল না, ছিল ভবিষ্যতের এক ঝলক।
এচেভেরিকে নিয়ে এত উন্মাদনা কেন?
মাত্র ৪৫ মিনিট খেলেই এচেভেরি তার জাত চিনিয়েছেন। তার অসাধারণ ফ্রি-কিক গোলটি ছিল ম্যাচটির অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এটি কেবল একটি গোল ছিল না, ছিল তার দুর্দান্ত কারিগরি দক্ষতা, শান্ত মনোভাব এবং প্রতিভার প্রমাণ। পেপ গার্দিওলা নিজেই উল্লেখ করেছেন যে, এচেভেরির এই সাফল্য রাতারাতি আসেনি। তরুণ এই খেলোয়াড় অনুশীলন শেষে একা একা ফ্রি-কিক অনুশীলন করতেন, যা অন্যদের চোখে পড়েনি। গার্দিওলা প্রশংসা করে বলেছেন, "তার পরিশ্রমের ফল সে পেয়েছে। এটি একটি অসাধারণ গোল এবং সে একজন অবিশ্বাস্য খেলোয়াড়।"
এচেভেরির প্রতিভার আরেকটি বড় প্রমাণ হলো ম্যান সিটি গোলরক্ষক স্টেফান ওর্তেগার মন্তব্য। তিনি এচেভেরিকে স্বদেশী জুলিয়ান আলভারেজের সাথে তুলনা করে তার "অবিশ্বাস্য ফিনিশিং" ক্ষমতার প্রশংসা করেছেন। আলভারেজ যেভাবে রিভার প্লেট থেকে সিটিতে এসে দ্রুত দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছেন, তা এচেভেরির জন্যও অনুপ্রেরণা এবং একটি উচ্চ মানদণ্ড।
কিংবদন্তিদের সঙ্গে তুলনা
এচেভেরিকে নিয়ে আলোচনায় কেবল আলভারেজ নয়, আরও অনেক কিংবদন্তির নাম উঠে আসছে। তাকে প্রায়শই "নতুন লিওনেল মেসি" হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মেসির মতোই তার ড্রিবলিং ক্ষমতা, বল নিয়ন্ত্রণ এবং দুর্দান্ত কৌশল তাকে এই উপাধি এনে দিয়েছে। তার অভিষেক ফ্রি-কিক গোলটিও যেন মেসিরই কোনো গোলের প্রতিচ্ছবি। তবে এচেভেরি নিজেও বিনয়ী। তিনি মনে করেন, তিনি মেসির স্তরের ধারেকাছেও নেই, মেসি তার কাছে একজন আদর্শ।
এছাড়াও, এচেভেরি নিজেই আর্জেন্টাইন প্লেমেকার পাবলো আইমারের প্রতি তার মুগ্ধতার কথা জানিয়েছেন। তার খেলার ধরন এবং ড্রিবলিং দক্ষতা আইমারের মতোই, যা তার শৈল্পিকতা এবং সংকীর্ণ জায়গায় বল নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষমতাকে তুলে ধরে। তার "এল দিয়াবলিয়ো" (ছোট শয়তান) উপাধিটি বলিভিয়ান কিংবদন্তি মার্কো এচেভেরির "এল দিয়াবলো" উপাধির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা তার বিদ্যুতগতির ড্রিবলিং এবং প্রতিপক্ষকে নাস্তানাবুদ করার ক্ষমতাকে নির্দেশ করে।
ফুটবল বিশেষজ্ঞরা তার খেলার ধরনকে ক্লাসিক আর্জেন্টাইন "এঙ্গাঞ্চে" (Enganche) ভূমিকার সাথে তুলনা করেন, যা লিওনেল মেসি এবং দিয়েগো ম্যারাডোনার মতো কিংবদন্তিরা পালন করেছেন। এই ভূমিকা অনুযায়ী, একজন অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার মাঠের মাঝখানে থেকে খেলার গতি নিয়ন্ত্রণ করেন এবং আক্রমণ সাজান।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পেপ গার্দিওলা যদিও ছোট স্কোয়াড নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করেন, কিন্তু এচেভেরির অসাধারণ পারফরম্যান্স তাকে এক 'মিষ্টি সমস্যায়' ফেলেছে। প্রিমিয়ার লিগের শারীরিক চাহিদা পূরণের জন্য তরুণ খেলোয়াড়দের সময় লাগে, কিন্তু এচেভেরির দক্ষতা এবং পরিশ্রম তাকে এখনই দলের অংশ হওয়ার যোগ্যতা এনে দিয়েছে।
যদিও তাকে ধারে অন্য কোনো ক্লাবে পাঠানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না, তবে ক্লাব বিশ্বকাপে তার নজরকাড়া পারফরম্যান্স গার্দিওলার সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে। এচেভেরি ২০২৮ সাল পর্যন্ত ম্যান সিটির সাথে চুক্তিবদ্ধ, যা তার প্রতি ক্লাবের দীর্ঘমেয়াদী আস্থাকে প্রমাণ করে।
ক্লদিও এচেভেরির অসাধারণ প্রতিভা, তার কিংবদন্তিদের সাথে তুলনা এবং ম্যানচেস্টার সিটির আর্জেন্টাইন ইতিহাসের ধারাবাহিকতা—সবকিছুই ইঙ্গিত দেয় যে, সে সত্যিই একজন বিশেষ খেলোয়াড়। ফুটবলের বিশ্ব অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এই তরুণ তারকার আগামী দিনের পথচলার দিকে।