ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চতুর্থ টেস্টে বল করছেন আনশুল কাম্বোজ (ছবির উৎস: AP) |
ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটে গত কয়েক বছর ধরে যে ক’জন তরুণ ক্রিকেটার নজর কেড়েছেন, তাদের মধ্যে আনশুল কাম্বোজ অন্যতম। হরিয়ানার এই ডানহাতি পেসার এবং অলরাউন্ডার তার গতি, ধারাবাহিকতা এবং কার্যকর ডেলিভারি দিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের ক্রিকেট মহলে নিজের একটি শক্ত অবস্থান তৈরি করে নিয়েছেন। তার উত্থান যেন এক স্বপ্নের মতো, যা শুরু হয়েছিল ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে।
ঘরোয়া ক্রিকেটে ধারাবাহিকতা
আনশুল প্রথম আলোচনায় আসেন ২০২২ সালের সৈয়দ মুশতাক আলি ট্রফিতে, যেখানে তিনি ৭ ম্যাচে ৭ উইকেট নিয়ে নিজের আগমনী বার্তা দেন। তবে তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয় ২০২৩/২৪ বিজয় হাজারে ট্রফি, যেখানে হরিয়ানার শিরোপা জয়ে তিনি রাখেন এক অবিস্মরণীয় অবদান। ১০ ম্যাচে ১৭ উইকেট শিকার করে তিনি শুধু বল হাতে জাদু দেখাননি, বরং তার অসাধারণ ইকোনমি রেট দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন কতটা নিয়ন্ত্রিত বোলিং তিনি করতে পারেন।
এই দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের ফলস্বরূপ, ২০২৪ সালের আইপিএল নিলামে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স তাকে দলে নেয়। এরপরই তিনি প্রথম-শ্রেণির ক্রিকেটে ২০২৪-২৫ দুলীপ ট্রফিতে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজের প্রতিভা আরও একবার প্রমাণ করেন।
রঞ্জি ট্রফিতে ঐতিহাসিক কীর্তি
২০২৪ সালের রঞ্জি ট্রফিতে আনশুল কাম্বোজের বোলিং ছিল এক অন্য মাত্রার। কেরালার বিরুদ্ধে তিনি যে পারফরম্যান্স দেখান, তা ভারতীয় ঘরোয়া ক্রিকেটের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ১০/৪৯ বোলিং পরিসংখ্যান নিয়ে তিনি একাই ১০ উইকেট শিকার করেন, যা রঞ্জি ট্রফির ইতিহাসে তৃতীয় বোলার হিসেবে তাকে এই বিরল কৃতিত্বের অধিকারী করে তোলে। এর আগে কেবল বাংলার প্রেমাংশু চ্যাটার্জি (১৯৫৬/৫৭) এবং রাজস্থানের প্রদীপ সুন্দরম (১৯৮৫/৮৬) এই কীর্তি গড়েছিলেন। তার সুইং এবং যেকোনো পিচে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা তাকে লাল বলের ক্রিকেটে এক অপরিহার্য খেলোয়াড়ে পরিণত করেছে।
২০২৪/২৫ রঞ্জি ট্রফি মৌসুমে আনশুল ২২ ম্যাচে ৭৪ উইকেট নিয়েছিলেন, যেখানে তার বোলিং গড় ছিল ২২.৬৬। এটি প্রমাণ করে যে দীর্ঘ পরিসরের ক্রিকেটেও তিনি কতটা ধারাবাহিক এবং কার্যকর।
ম্যানচেস্টার টেস্ট আনশুল কাম্বোজের পারফর্মেন্স জানতে ক্লিক করুন এখানে
আইপিএলে নতুন ঠিকানা
আনশুল কাম্বোজের এই ধারাবাহিক এবং উন্নত পারফরম্যান্সের ফল তিনি পেয়েছেন ২০২৫ সালের আইপিএল মেগা নিলামে। তাকে দলে নিতে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, লখনউ সুপার জায়ান্টস এবং দিল্লি ক্যাপিটালসের মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতা হলেও শেষ পর্যন্ত চেন্নাই সুপার কিংস ৩.৪০ কোটি টাকায় তাকে কিনে নেয়। এটি তার ক্রমবর্ধমান খ্যাতি এবং ভারতীয় ক্রিকেটে তার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়।
ম্যানচেস্টারে টেস্ট অভিষেক কঠিন পরীক্ষার শুরু
ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক – এটি সহজ চ্যালেঞ্জ নয়। রবিচন্দ্রন অশ্বিন ম্যাচের পর বলেছিলেন, কাম্বোজের গতি আইপিএলের তুলনায় কিছুটা কম মনে হয়েছে। এটি অনেক সময় তরুণ ফাস্ট বোলারদের জন্য স্বাভাবিক, বিশেষ করে লম্বা ফরম্যাটে প্রথমবার খেললে। তবে চাপের মধ্যে থেকেও তিনি বেন ডাকেটকে আউট করে নিজের প্রথম আন্তর্জাতিক উইকেট নেন – যেটি আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখবে।
আনশুল কাম্বোজ নিঃসন্দেহে ভারতীয় ক্রিকেটের আগামী দিনের তারকা। তার হার না মানা মানসিকতা এবং বল হাতে অসামান্য দক্ষতা তাকে আরও অনেক দূর নিয়ে যাবে বলেই আশা করা যায়।