এশিয়া কাপ ২০২৫: পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে ভারতের নতুন পরিকল্পনা

পাকিস্তান ম্যাচের আগে ফিল্ডিং ও ব্যাটিংয়ে নতুন পরিকল্পনায় ভারতীয় দল
এশিয়া কাপ ২০২৫

সীতাংশু কোটাক জোর দিয়ে বলেছেন যে তিন নম্বরের পরে ব্যাটিং অর্ডার বেশিরভাগই নমনীয়। ©AFP

দুবাইয়ের আইসিসি অ্যাকাডেমিতে যেন ছোট্ট এক উৎসবের আবহ। ভারতের সহ-অধিনায়ক শুভমান গিল যখন এক হাতে লাফিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন, তখন ফিল্ডিং কোচ টি. দিলীপও মুগ্ধ হয়ে উঠলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে হাইভোল্টেজ ম্যাচের মাত্র দুই দিন আগে এই অনুশীলন সেশন যেন দলের জন্য ছিল অন্য রকম বার্তা—ফিল্ডিংয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলাদা করে মনোযোগ।

ফিল্ডিংয়ে অ্যাকশনের মুহূর্ত

খেলোয়াড়দের দেখা গেলো গোলপোস্টের মতো করে শরীর ছুঁড়ে দিয়ে বল থামাতে, কখনো আবার মাটি থেকে ইঞ্চি খানেক ওপরে ক্যাচ তুলে নিতে। শুভমান গিল আর রিঙ্কু সিং একসাথে ড্রিলে ব্যস্ত, তাদের পরে মাঠে নামলেন অভিষেক শর্মা ও তিলক ভার্মা। সেশনটা শুরুর আগে হার্দিক পান্ডিয়া নিজের হাতে ড্রিল শুরু করে দলের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য ছড়িয়ে দেন।

অনুশীলনের এক পর্যায়ে পুরো দলই হালকা মেজাজে অংশ নিলো এক বিশেষ খেলায়। দিলীপ এক প্রান্ত থেকে বল ছুঁড়ছিলেন, খেলোয়াড়রা দল ভাগ হয়ে ছুটে এসে ক্যাচ ধরছিলেন, তারপর চেষ্টা করছিলেন স্টাম্প বা রোলার আঘাত করতে। প্রতি মুহূর্তে শোনা যাচ্ছিলো—“ওহ!”, “আহ!” আর খেলোয়াড়দের হাই-ফাইভ, হাসি ও মজার আলাপ।

নেট সেশন: বুমরাহ, পান্ডিয়া ও দুবে

ফিল্ডিংয়ের পর নেটে চলে গেলেন বুমরাহ, পান্ডিয়া আর শিবম দুবে। প্রায় এক ঘণ্টা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের গরমে বোলিং করলেন তারা। সমতল পিচেও বুমরাহর বাউন্স গিল ও অভিষেককে যথেষ্ট পরীক্ষা নিলো। এদিকে আর্শদীপ সিং ও হর্ষিত রানা ফিল্ডিং সেশন শেষে নেটে যোগ দেন।

ফ্লেক্সিবল ব্যাটিং অর্ডার

কেবল ফিল্ডিং নয়, ভারতীয় দলের আরেকটি মূল শক্তি হলো ফ্লেক্সিবল ব্যাটিং অর্ডার। ব্যাটিং কোচ সীতাংশু কোটাক সংবাদ সম্মেলনে স্পষ্ট জানান—নির্দিষ্ট কোনো পজিশন নেই, দলের প্রয়োজনে যে কেউ যেকোনো জায়গায় নামতে প্রস্তুত।

“সঞ্জু হয়তো ৫ বা ৬ নম্বরে বেশি খেলেনি, কিন্তু সে যথেষ্ট মানসম্পন্ন ব্যাটার। দলের প্রয়োজনেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” — সীতাংশু কোটাক

ফ্লেক্সিবিলিটি ও দলের মানসিকতা

তিলক ভার্মা, সূর্যকুমার যাদব, হার্দিক পান্ডিয়া, শিবম দুবে কিংবা অক্ষর প্যাটেল—সবার মানসিকতা একই। নির্দিষ্ট কোনো ক্রমে আটকে নেই কেউ, পরিস্থিতি অনুযায়ী সবাই প্রস্তুত। ওপেনিং জুটি ও তিন নম্বর পজিশন ছাড়া বাকি অর্ডার পুরোপুরি ফ্লেক্সিবল।

গত বিশ্বকাপেও দেখা গিয়েছিলো অক্ষর প্যাটেলকে ফ্লোটার হিসেবে নামাতে বা সূর্যকুমার-তিলককে অবস্থান বদল করতে। এই ফ্লেক্সিবিলিটি এখন ভারতের অন্যতম বড় শক্তি। এমনকি যারা ম্যাচে সুযোগ পান না—যেমন আর্শদীপ সিং—তারা দলীয় পরিকল্পনার বাইরে নন। কোটাকের ভাষায়, “এখানে কোনো ব্যক্তিগত পছন্দ নেই। যারা মাঠে নামছে না, তারাও সতীর্থদের সাপোর্ট করে যাচ্ছে। এটিই দলের আসল শক্তি।”

শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

অভিজ্ঞ কোচের চোখে এই অনুশীলন শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং মানসিক দৃঢ়তারও পরীক্ষা। পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ভারতীয় দল তাই দুই বিষয়কে সামনে রাখছে—ফিল্ডিংয়ের উৎকর্ষ আর ব্যাটিং অর্ডারের ফ্লেক্সিবিলিটি। দুবাইয়ের গরমে ঘাম ঝরিয়ে সেই প্রস্তুতি যেন এবার ভারতকে আরও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস দিচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন