ভারত অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির মহড়া করার চেষ্টা করেছে, কিন্তু এমন কিছু বিষয় আছে যার জন্য আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়া যায় না। যেমন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে ঘিরে তৈরি হওয়া অতিরিক্ত আবহ ও আনুষঙ্গিক চাপ। © Getty |
ভারত-পাকিস্তান মানেই ক্রিকেট বিশ্বে আলাদা উত্তেজনা। এই দুই দলের লড়াই শুধু খেলাই নয়, বরং আবেগ, কোলাহল আর নাটকীয়তায় ভরপুর। এশিয়া কাপে রবিবার দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে আবার মুখোমুখি হচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ও পাকিস্তান।
ভারতের প্রস্তুতি: বিশৃঙ্খলার মধ্যেই মহড়া
ভারতীয় দল সাম্প্রতিক সময়ে এমন সব অনুশীলন করেছে, যা তাদের মানসিকভাবে অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত রাখবে। ফিল্ডিং প্র্যাকটিসে খেলোয়াড়দের সরাসরি ফ্লাডলাইটের দিকে তাকিয়ে ক্যাচ ধরতে বলা হয়েছে—যাতে চাপের মধ্যে মনোযোগ ধরে রাখার দক্ষতা বাড়ে।
এছাড়া ব্যাটিং অর্ডারে পরিবর্তন, বোলারদের ভিন্ন ভিন্ন জায়গায় দাঁড় করানো, এমনকি পার্ট-টাইম বোলারদের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বোলিং করানোর মতো কৌশলও প্রয়োগ করা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটাই—যে কোনো পরিস্থিতিতে দল যেন প্রস্তুত থাকে।
তবুও ভারত জানে, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ মানে সবকিছুই ভিন্ন। যত মহড়া দেওয়া হোক, মাঠের ভেতরের চাপ, দর্শকদের আবেগ আর প্রতিদ্বন্দ্বিতার তীব্রতা আগে থেকে আঁচ করা কঠিন।
পাকিস্তানের অনিশ্চয়তা
অন্যদিকে পাকিস্তানের প্রস্তুতি যেনো বিশৃঙ্খলার সঙ্গেই মিশে আছে। ভারত ম্যাচের আগে তারা নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলন বাতিল করেছে। এর আগে এই ধরনের ঘটনায় খেলা দেরিতেও শুরু হয়েছিল। তাই তাদের দিক থেকে স্পষ্ট পরিকল্পনার চেয়ে অনিশ্চয়তাই বেশি চোখে পড়ছে।
তবে পাকিস্তানের বিশেষত্ব হলো—তারা যে কোনো সময় খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সাইম আইয়ুবের ফর্ম খারাপ গেলেও, শাহীন আফ্রিদির ব্যাটে-বলে লড়াই ফেরানোর ক্ষমতা আছে।
ম্যাচের তথ্য
📅 তারিখ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
🕡 সময়: সন্ধ্যা ৬:৩০ (স্থানীয়), রাত ৮:০০ (IST)
🏟️ ভেন্যু: দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম
পিচ হতে পারে ধীর এবং শুকনো, যেখানে টস খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গরম আবহাওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে, তবে ভেন্যুর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বড় সংগ্রহই হতে পারে ম্যাচের নিয়ামক।
দলের খবর
ভারত
ওমানের বিপক্ষে রোটেশন নীতি প্রয়োগ করার পর, এবার পূর্ণ শক্তিতে নামবে ভারত। জাসপ্রিত বুমরাহ ও বরুণ চক্রবর্তী ফিরবেন দলে। অক্ষর প্যাটেলও সুস্থ হয়ে ফিরেছেন।
সম্ভাব্য একাদশ:
অভিষেক শর্মা, শুভমান গিল, সূর্যকুমার যাদব (অধিনায়ক), তিলক ভার্মা, সঞ্জু স্যামসন (উইকেটরক্ষক), শিবম দুবে, হার্দিক পান্ডিয়া, অক্ষর প্যাটেল, কুলদীপ যাদব, জাসপ্রিত বুমরাহ, বরুণ চক্রবর্তী।
পাকিস্তান
হারিস রউফ ও খুশদিল শাহকে ফিরিয়ে এনে কিছুটা ভারসাম্য খুঁজে পেয়েছে পাকিস্তান। নজর থাকবে ওপেনার সাইম আইয়ুব ও তরুণ ব্যাটার হাসান নওয়াজের দিকে।
সম্ভাব্য একাদশ:
সাইম আইয়ুব, সাহেবজাদা ফারহান, মোহাম্মদ হারিস (উইকেটরক্ষক), ফখর জামান, সালমান আঘা (অধিনায়ক), খুশদিল শাহ, হাসান নওয়াজ, মোহাম্মদ নওয়াজ, শাহীন আফ্রিদি, হারিস রউফ, আবরার আহমেদ।
নজরে যাদের রাখবেন
- অভিষেক শর্মা (ভারত): ৪৪ বলে ৯৯ রান, ২২৫ স্ট্রাইক রেট—তরুণ ওপেনারের বিস্ফোরক ফর্ম ভারতের বড় ভরসা।
- কুলদীপ যাদব (ভারত): পাকিস্তানি ব্যাটারদের বিপক্ষে বারবার সফল। তার ঘূর্ণিতে বিপদে পড়তে পারেন ফখর জামানরা।
- শাহীন আফ্রিদি (পাকিস্তান): শুধু বল নয়, ব্যাট হাতেও অবদান রাখছেন। দলের মোট ছক্কার প্রায় অর্ধেক এসেছে তার ব্যাট থেকে।
পরিসংখ্যান
- পাকিস্তান এই এশিয়া কাপে এখন পর্যন্ত আক্রমণাত্মক শট খেলতে গিয়ে সর্বাধিক (২২) উইকেট হারিয়েছে।
- সূর্যকুমার যাদব মনে করেন, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ প্রতিদ্বন্দ্বিতা নয় বরং দর্শকদের জন্য "বিনোদন"।
চূড়ান্ত কথা
ভারত মহড়ায় ব্যস্ত থেকেছে, পাকিস্তান ডুবে আছে অনিশ্চয়তায়। তবে মাঠের লড়াই সবসময়ই নতুন গল্প লেখে। রবিবার রাতে দুবাইয়ের গরম আবহাওয়ার মাঝে কে এগিয়ে যাবে—ভারতের পরিকল্পনা নাকি পাকিস্তানের অপ্রত্যাশিত চমক? উত্তরটা মিলবে মাঠেই।