নাসুম আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। © BCB |
বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার নাসুম আহমেদ যেন এক অদ্ভুত চরিত্র। একাদশে নিয়মিত সুযোগ না পেলেও তিনি ভেতরে ভেতরে কখনোই অস্থির হন না। বরং মানসিকভাবে সবসময় তৈরি থাকেন—যেন যখনই ডাক আসে, তখনই নিজের সেরাটা দিতে পারেন।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবুধাবি থেকে দুবাই রওনা হওয়ার আগে দলের হোটেলে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নাসুম খোলামেলা ভাবে বললেন,
"আমি সবসময় খেলার জন্য প্রস্তুত থাকি। চেষ্টা করি নিজের সেরাটা দেওয়ার। কখনও সেটা কাজে আসে, আবার কখনও আসে না। তবে আমি ভেতর থেকে তৈরি থাকি।"
সুযোগ কম, কিন্তু প্রভাব বড়
এশিয়া কাপে প্রথম দুটি ম্যাচে হংকং ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তিনি মাঠে নামার সুযোগ পাননি। তবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একাদশে ফিরেই বাজিমাত করেন। শেখ মেহেদীর জায়গায় খেলতে নেমে ৪ ওভারে মাত্র ১১ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট—আর হয়ে যান ম্যাচসেরা।
একই ছবি দেখা গেছে নেদারল্যান্ডস সিরিজেও। প্রথম ম্যাচে ছিলেন বাইরে। কিন্তু দ্বিতীয় ম্যাচে সুযোগ পেতেই ৩ উইকেট নিয়ে মাত্র ১১ রান খরচ করেন। আবারও হাতে ওঠে ম্যাচসেরার পুরস্কার।
শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে শুরু করে বাংলাদেশ ১২টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও নাসুম সুযোগ পেয়েছেন মাত্র চারটিতে। তবু ফিরে আসার পরপরই প্রভাব রাখতে পারা যেন তার সহজাত।
তিনি হাসিমুখে বললেন,
"ফেরত এসে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া আমার কাছে নতুন কিছু নয়। আগেও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে এমনটা হয়েছিল।"
দলের পরিকল্পনায় মেনে নেওয়া
নাসুম জানেন, সুযোগ পাওয়া না-পাওয়ার বিষয়টা সম্পূর্ণই দলের কৌশল ও প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভরশীল।
তার ভাষায়,
"এটা সবসময় দলের পরিকল্পনার ওপর নির্ভর করে। কখনও একজনকে বাইরে বসতে হয়। তবে সেটা নিয়ে আমি ভাবি না। চেষ্টা করি মানসিকভাবে সবসময় প্রস্তুত থাকতে। যাতে সুযোগ পেলেই ভালো করতে পারি।"
অনিয়মিত হয়েও ধারাবাহিক
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পুরো সিরিজে একাদশে জায়গা হয়নি। পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজেও প্রথম দুটি ম্যাচে ছিলেন বাইরে। শেষ ম্যাচে ফিরেই আবারও আলো ছড়ালেন—৪ ওভারে ২২ রানে ২ উইকেট। প্রায় দুই বছর পর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে সেটাই ছিল তার প্রত্যাবর্তন।
২০২৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সব ফরম্যাট মিলিয়ে তিনি খেলেছেন মাত্র ছয়টি সাদা বলের ম্যাচ। সুযোগ খুব কম, কিন্তু প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা তাতে একটুও কমেনি।
এখন বাংলাদেশের অপেক্ষা
এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্ব শেষ করেছে বাংলাদেশ। এখন তাকিয়ে থাকতে হবে ১৮ সেপ্টেম্বরের শ্রীলঙ্কা বনাম আফগানিস্তান ম্যাচের দিকে। সমীকরণটা পরিষ্কার—আফগানিস্তান জিতলে তারা যাবে সুপার ফোরে। আর বাংলাদেশের জন্য দরকার শ্রীলঙ্কার জয়। অথবা শ্রীলঙ্কা যদি হারে, তবে সেটি হতে হবে বিশাল ব্যবধানে—প্রায় ৭০ রানে বা অন্তত ৫০ বল হাতে রেখেই।
বাংলাদেশের ভাগ্য এখন অন্য দলের হাতে, কিন্তু নাসুমের মতো ক্রিকেটাররা প্রমাণ করছেন—প্রস্তুতি থাকলে সুযোগ আসলেই তার মূল্য চুকিয়ে দেওয়া যায়।