
অস্ট্রেলিয়া ওডিআইয়ের দলে রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলি" (ছবি: গেটি)
ভারতীয় ক্রিকেটের দুই উজ্জ্বল নক্ষত্র—রোহিত শর্মা এবং বিরাট কোহলি-র ক্ষেত্রে যেন এবার কঠিন বাস্তব মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রায় দু'দশক ধরে ভারতীয় ক্রিকেটের পতাকাবাহী এই দুই মহাতারকার দিন বদলের পালা চলছে। টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই সরে গিয়েছেন, আর এখন তাদের খেলার একমাত্র ফরম্যাট—৫০ ওভারের ক্রিকেট থেকেও তাদের 'অপরিহার্যতা' উধাও হয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত মিলছে। এখন থেকে হয়তো আর বিশেষ কোনো সুবিধা নয়, বরং সাধারণ নির্বাচনি মাপকাঠির দিয়েই তাদের বিচার করা হবে।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজের জন্য ওডিআই দল নির্বাচনের উদ্দেশ্যে শনিবার নির্বাচক কমিটি বৈঠকে বসেছিল। সেখানে এই দুই আইকনের দীর্ঘমেয়াদী ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা কোনো স্পষ্ট কথা বলেনি। বরং, নতুন ওডিআই অধিনায়ক শুভমন গিল-এর ওপর বিশাল আস্থা রাখা হয়েছে। বিশেষ করে ২০২৭ সালের বিশ্বকাপকে লক্ষ্য রেখে গিলের হাতে নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোহিত এবং কোহলির ভবিষ্যৎ নিয়ে এমন কোনো স্পষ্ট বার্তা নেই।
প্রধান নির্বাচক অজিত আগরকার বলেন, "আমার মনে হয় না আজ আমাদের এই বিষয়ে কথা বলার দরকার আছে। এই মুহূর্তে তারা এই ফরম্যাটই খেলছেন। আমরা তাদের দলে রেখেছি।" তবে ২০২৭ বিশ্বকাপ নিয়ে বিষয়টি আপাতত খোলা রাখা হয়েছে—অবশ্যই গিল ছাড়া, যার নেতৃত্বেই দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়াতে অনুষ্ঠিতব্য সেই টুর্নামেন্টে দল নামবে। নির্বাচক কমিটি তিন ফর্ম্যাটে তিন জন ভিন্ন অধিনায়ক রাখার পক্ষেও নন।
এ কারণেই নির্বাচকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে গিলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, ঠিক যেমন টি-টোয়েন্টি দল নির্বাচনের সময় সূর্যকুমার যাদবকে ডাকা হয়েছিল।
বয়সের কাঁটা: নির্বাচকদের মাথাব্যথা
রোহিত ও কোহলির বয়স নির্বাচকদের মনে বিশেষভাবে গুরুত্ব পেয়েছে। কোহলির বয়স এখন ৩৬, আর ২০২৭ বিশ্বকাপ শুরুর সময় তার ৩৯ বছর হয়ে যাবে। অন্যদিকে, বর্তমানে ৩৮ বছর বয়সী রোহিত তখন ৪০-এ পা দেবেন। স্পষ্টতই, বয়স তাদের পক্ষে নেই। নির্বাচকরা যে বেশ কিছুদিন ধরেই এই বিষয়টি নিয়ে ভাবছেন, তা জানা যায়।
আগরকার নিশ্চিত করেছেন যে তিনি রোহিতের সাথে কথা বলেছেন, তবে সেই কথোপকথন সম্প্রতি হয়েছে এমন সম্ভাবনা কম। সূত্র বলছে, রোহিতকে সিদ্ধান্তটি আগেই জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে রোহিত এটিকে কীভাবে নিয়েছেন, সে বিষয়ে প্রধান নির্বাচক আগরকার ব্যাখ্যা দেননি। তিনি শুধু বলেছেন, "এটা আমার আর রোহিতের একান্ত ব্যক্তিগত আলোচনা। কিন্তু যেমনটা আমি আগেই বলেছি, তাকে সব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।"
রোহিতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে নানা জল্পনা থাকলেও, সূত্রগুলি ইঙ্গিত দিচ্ছে যে এই দুই অভিজ্ঞ খেলোয়াড়কে ঘিরে ২০২৭ বিশ্বকাপের পরিকল্পনা করা সহজ হবে না। বয়সের বিষয়টি ছাড়াও, টুর্নামেন্টের আগে ভারতের মাত্র নয় থেকে দশটি ওডিআই ম্যাচ খেলার সূচি রয়েছে—যদি না অতিরিক্ত কোনো সিরিজ আয়োজন করা হয়।
ঘরোয়া ক্রিকেটের দরজা এখন খোলা
ওডিআই ক্যারিয়ার দীর্ঘায়িত করতে হলে তাদের দু'জনকেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ফিরতে হবে, যা এখন 'বাধ্যতামূলক' (non-negotiable)। আগরকার এই বিষয়ে স্পষ্ট: "আমার মনে হয় আমরা এটা কয়েক বছর আগেই পরিষ্কার করে দিয়েছি। যখনই খেলোয়াড়রা আন্তর্জাতিক ম্যাচ থেকে বিরতি পাবে, তখনই তাদের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা উচিত। এটিই নিজেদেরকে খেলার মধ্যে ও ফিট রাখার একমাত্র উপায়।" উল্লেখ্য, কোহলি ২০১৩ সালের পর থেকে ঘরোয়া ৫০ ওভারের টুর্নামেন্ট বিজয় হাজারে ট্রফিতে (VHT) খেলেননি। রোহিত শেষ VHT ম্যাচ খেলেছিলেন ২০১৮ সালে।
এছাড়াও, তাদের রান করাও বন্ধ করা চলবে না। প্রধান নির্বাচক বলেছেন, "তারা বছরের পর বছর ধরে যা করে আসছে—রান করার চেষ্টা করা—আমার মনে হয় না সেই প্রত্যাশা বদলাবে। তারা এখনও দেশের জন্য খেলছেন। তারা এখনও ড্রেসিংরুমের নেতা। এবং আমরা আশা করি তারা তাই থাকবে। কিন্তু দিন শেষে, সবটাই রান। তারা দু'জনেই রানের পাহাড় গড়েছে এবং এই ফর্ম্যাটে অবিশ্বাস্য সফল। তাই আমরা আশা করি তারা এটা চালিয়ে যাবে।"
রোহিতের প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যাওয়া। এই নতুন পরিস্থিতিতে তিনি কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেন, তা এখন জল্পনার বিষয়। কিন্তু এতে সন্দেহ নেই যে, তার এবং তার এই তারকা সতীর্থের জন্য সামনে অপেক্ষা করছে কঠিন পথ।