৫-০ ব্যবধানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল অস্ট্রেলিয়া!

অস্ট্রেলিয়া দল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে টি-টোয়েন্টি সিরিজের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ট্রফি উদযাপন করছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৫-০ ব্যবধানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর অস্ট্রেলিয়া দলের উদযাপন | ছবি: Cricket Australia

 

ওয়ার্নার পার্ক, সেন্ট কিটস অ্যান্ড নেভিস

টি-টোয়েন্টি সিরিজ | অস্ট্রেলিয়া বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ | পঞ্চম ম্যাচ

ক্রিকেট বিশ্বের দুই ঐতিহ্যবাহী দল – অস্ট্রেলিয়া এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক সময় যাদের মধ্যকার লড়াই ছিল চোখধাঁধানো, বর্তমানে সেই চিত্রটা কেমন যেন একতরফা হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে এই টি-টোয়েন্টি সিরিজে।

পাঁচ ম্যাচের সিরিজে একটিও ম্যাচ জিততে পারল না ওয়েস্ট ইন্ডিজ। হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন—একটিও না। ৫-০ তে ধ্বংসযজ্ঞের মতো এক হোয়াইটওয়াশের শিকার হল তারা। এবং এই সিরিজের শেষ ম্যাচেই যেন ফুটে উঠল পুরো সিরিজের প্রতিচ্ছবি—দুর্বল মোমেন্টাম, ভঙ্গুর ব্যাটিং অর্ডার, এবং লড়াকু মানসিকতার অভাব।

শেষ ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ১৭০ রান করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তেমন খারাপ স্কোর নয়। শিমরন হেটমায়ার চেষ্টা করেছিলেন, ৩১ বলে ৫২ রানের ইনিংসটি ছিল ঝলমলে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং একরকম ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়েছে। দলের বাকিদের কাছ থেকে আসেনি পর্যাপ্ত সহায়তা। যেন কেউ একজন ইনিংস গড়লেই বাকিরা শুধু দেখছে।

১৭০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে গিয়ে শুরুতেই চাপে পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। মাত্র ২৫ রানে পড়ে যায় ৩ উইকেট। এই মুহূর্তে হয়তো অনেকেই ভাবছিলেন, অবশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজ একটা ম্যাচ জিতবে। কিন্তু না—অস্ট্রেলিয়া দেখিয়ে দিল কেন তারা এখনো বিশ্বের অন্যতম সেরা টি-টোয়েন্টি দল।

ক্যামেরন গ্রিন, টিম ডেভিড, মিচ ওয়েন—এই তিন ব্যাটার যেন নির্ভীক সেনানী। চাপের মুখেও তারা খেলেছেন মুক্ত মনে, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। ডেভিড ১২ বলে চারটি ছক্কা মেরে বুঝিয়ে দিলেন, টি-টোয়েন্টিতে ‘চরিত্র’ কাকে বলে।

মিচেল মার্শের নেতৃত্বে এই অস্ট্রেলিয়া দল একেবারে বদলে গেছে। ম্যাচ শেষে মার্শ স্বীকার করেছেন"সিরিজ শুরুর আগে আমি ৫-০ ফলাফল আশা করিনি"। কথাটা একেবারে বাস্তববাদী, কিন্তু এর পেছনে কাজ করেছে দলগত প্রচেষ্টা এবং ইতিবাচক পরিকল্পনা। বিশেষ করে মার্শের এই কথায় একটা বড় বার্তা আছে:
"কোনো অস্ট্রেলিয়ান দল এর আগে টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ক্লিন সুইপ করেনি—এটা আমাদের একটা মোটিভেশন ছিল।"

এই হোয়াইটওয়াশ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। তার আগে টেস্ট সিরিজেও ৩-০ ব্যবধানে হার, এবং সেই সিরিজে তৃতীয় টেস্টে মাত্র ২৭ রানে অলআউট টেস্ট ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন স্কোর।

এই একের পর এক ভরাডুবি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটকে একটা গভীর সংকেতে নিয়ে যাচ্ছে। দলটি কেবল ম্যাচ হারছে না, হারাচ্ছে আত্মবিশ্বাস, ঐতিহ্য এবং ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাও।

ক্রিকেট ওয়েস্ট ইন্ডিজের সভাপতি ড. কিশোর শ্যালো ইতোমধ্যে এই পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য জরুরি সভার ডাক দিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন একটাই—এই দলটিকে শুধরে তোলার মতো সাহস ও সঠিক সিদ্ধান্ত কি কেউ নিতে পারবেন?

অস্ট্রেলিয়ার এই সিরিজ জয় নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক সাফল্য। তবে এই সাফল্য যতটা না তাদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রমাণ, তার চেয়ে বেশি ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যর্থতার আয়না।

একটা সময় ছিল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ মানেই ছিল দাপুটে ফাস্ট বোলিং আর ছক্কার ঝড়। এখন সেই দলটি বাঁচার লড়াই চালাচ্ছে। 

না-হলে হার শুধু পরিসংখ্যান নয়, এক সময় হবে অস্তিত্ব সংকটের নাম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন