ফারহান ও আইয়ুবের ব্যাটিংয়ে লাউডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে পাকিস্তানের টি-২০ সিরিজ জয়

এটি সপ্তমবারের মতো পাকিস্তান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জিতলো।

সিরিজ জয়ের পর উল্লাসে ফেটে পড়েছেন সালমান আগা ও পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রা
পাকিস্তান দলের খেলোয়াড়রা লাউডারহিলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-২০ সিরিজ জয়ের পর উদযাপন করছেন।AFP 


শেষ বলটি করা হয়েছে। স্কোরবোর্ডে ভেসে উঠছে ১৩ রানের জয়। মাঠে উল্লাস করছে সবুজ জার্সির একদল তরুণ, যাদের মাঝে নতুন মুখের প্রাধান্য বেশি। কিন্তু তাদের চোখেমুখে পরিণত দলের আত্মবিশ্বাস। লাউডারহিলের মাটিতে পাকিস্তান দল জয় ছিনিয়ে নিয়েছে কেবল একটি ম্যাচ নয়, বরং টানা সপ্তম টি-২০ সিরিজও নিশ্চিত করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আর এই জয়ে অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন দুই ওপেনার—সাহেবজাদা ফারহান ও সাইম আইয়ুব।

এই ম্যাচটি কেবল একটি পরিসংখ্যান নয়, এটি এক গল্প। নতুন নেতৃত্ব, নতুন চেহারার দল, তারুণ্যনির্ভর পরিকল্পনা এবং পুরনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী ক্রিকেট খেলা—সবমিলিয়ে এটি পাকিস্তানের ভবিষ্যৎ টি-২০ দিকনির্দেশনার প্রতিচ্ছবি বললেও ভুল হবে না।

১৩৮ রানের ধৈর্যশীল অথচ কার্যকর ওপেনিং জুটি

টি-২০ ক্রিকেটে ১৩৮ রানের উদ্বোধনী জুটি শুনলে প্রথমেই মনে হতে পারে এটি অত্যন্ত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের ফসল। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। ফারহান ও আইয়ুবের ইনিংসে গতি ছিল, ছিল সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা, তবে তা আগ্রাসন দিয়ে নয়, বরং বুঝেশুনে খেলেই।

প্রথম দিকে পাকিস্তান একটু সাবধানীভাবেই শুরু করেছিল। আগের ম্যাচের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে তারা বুঝেছিল, দ্রুত উইকেট হারানো মানেই চাপের মুখে পড়া। তাই প্রথম কয়েক ওভার তারা কেবল বলের মেধাবী ব্যবহার করেই কাটিয়ে দেন। কিন্তু যেটি নজর কাড়লো, সেটি হলো ইনিংসের মাঝামাঝি সময় থেকে ধীরে ধীরে গিয়ার বদলানো। মাঝে মাঝেই বড় শট খেললেও, মোটের উপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বলার মতো আগ্রাসী কিছুর অভাব ছিল পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে—যেটি শেষ চার ওভারে এসে একেবারে বদলে যায়।

পাকিস্তান vs ওয়েস্ট ইন্ডিজ | ৩য় টি-২০

পাকিস্তান

১৮৯/৪ (২০)

ফারহান ৭৪, আইয়ুব ৬৬
ওয়েস্ট ইন্ডিজ

১৭৬/৬ (২০)

হারিস রউফ ২ উইকেট
ফলাফল: পাকিস্তান জয়ী ১৩ রানে
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: সাহেবজাদা ফারহান

শেষ দিকে ছক্কার বৃষ্টি, স্কোর ছুঁল ১৮৯

শেষ চার ওভারে পাকিস্তান তুলেছে ৫৩ রান। টি-২০-তে এটি যে কোনো দলের জন্যই ম্যাচ টার্নার হতে পারে, আর এখানেই ফারহান-আইয়ুব জুটির গুরুত্ব বোঝা যায়। এই পার্টনারশিপ না থাকলে পাকিস্তান এমন স্কোরে পৌঁছাতে পারতো না।

হাসান নওয়াজ ও অন্যান্য ব্যাটারদের ঝড়ো ক্যামিও ইনিংস, বিশেষ করে শেষ ওভারে ২০ রান, পাকিস্তানকে এমন একটি লক্ষ্য উপহার দেয় যা প্রতিপক্ষের জন্য ‘চেজযোগ্য’ হলেও সহজ নয়।

বোলিংয়ে ফিনিশিং মুভ: রউফ-মুকিমের তাণ্ডব

ওয়েস্ট ইন্ডিজ শুরু করেছিল দারুণভাবে। মাত্র দুই ওভারেই স্কোরবোর্ডে ৩৩ রান! পাকিস্তানি দর্শকদের মনে তখন খানিকটা উদ্বেগ—এই তো বুঝি হাতছাড়া হয়ে যাবে ম্যাচ। কিন্তু সেই মুহূর্তেই বল হাতে দায়িত্ব তুলে নেন হারিস রউফ। পেস, লাইন ও লেংথে তিনি যেন আদর্শ হয়ে উঠলেন পাকিস্তানের ডেথ ওভারের বোলিংয়ের।

আরেক পাশে ছিলেন নবাগত সুফিয়ান মুকিম। হোল্ডারের বিপক্ষে তাঁর বলে যা ঘটলো, তা কেবল ক্রিকেট নয়, নাট্যশিল্প। অফ স্টাম্পের ঠিক বাইরে ফ্লিপার, আর হোল্ডার তখনও বুঝে উঠতে পারেননি যে তিনি বোল্ড হয়েছেন—এটি পাকিস্তানের পক্ষে টার্নিং পয়েন্ট হয়ে ওঠে।

চেজের অবসর ও কৌশলগত ভুল

এই ম্যাচে একটি কৌতূহলজাগানিয়া ঘটনা ঘটেছিল—রস্টন চেজকে রিটায়ার্ড আউট করে ক্রিজে পাঠানো হয় জেসন হোল্ডারকে। টি-২০-তে এই সিদ্ধান্ত অপ্রচলিত হলেও দলের কৌশলের অংশ হিসেবে এটিকে অনেকে সাহসী পদক্ষেপ বলতেই পারেন।

কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সফল? হোল্ডার ব্যাট হাতে কিছুটা আগুন ছড়ালেও, মুকিমের নিখুঁত বল এবং রউফের পরিকল্পিত আক্রমণের সামনে ব্যর্থ হন। বলা যায়, পাকিস্তানের ডেথ বোলিংয়ের সামনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের যে কোনো ‘ফায়ারপাওয়ার’-ই ছিল অসহায়।

এই জয় কেবল এক সিরিজ নয়, একটি বার্তা

এই সিরিজজয় যেন পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তগুলোর পক্ষে এক প্রমাণ। তরুণদের সুযোগ দেওয়া, সিনিয়র নির্ভরতা কিছুটা কমানো, এবং ম্যাচ পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী কৌশল নির্ধারণ—সব মিলিয়ে পাকিস্তান দলে একটি নতুন হাওয়া বইছে।

ফারহান ও আইয়ুবের ব্যাটিং, রউফ-মুকিমের বোলিং, এবং সামগ্রিকভাবে পাকিস্তান দলের সংহতি—সবই ইঙ্গিত দেয় যে তারা ভবিষ্যতের দিকে আগাচ্ছে সঠিক পথে।

পাকিস্তান দলের জন্য এই সিরিজ জয় শুধুই পরিসংখ্যানের খাতায় একটি চিহ্ন নয়। এটি ভবিষ্যতের পরিকল্পনার একটি শক্ত ভিত্তি। যারা আজ লাউডারহিলে জয়োল্লাস করলো, তারা হয়তো আগামী বিশ্বকাপে পাকিস্তানের মুখ হয়ে উঠবে।

সাহেবজাদা ফারহান, সাইম আইয়ুব, হারিস রউফ, সুফিয়ান মুকিম—এই নামগুলো হয়তো আজ হেডলাইন, কিন্তু কাল তারা ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন